রবিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০০৮

বন্ধু তোমায় মনে পড়ে।


আজ সব বন্ধু-বান্ধবীরা এক সাথে বসেছিলাম মনে মনে ঠিক করে নিয়েছিলাম আজ আমি চোখের জল ফেলবনা।  কিন্তু সবাই এক সাথে হয়ে তোমার কথা বলে উঠতেই নিজের চোখের জল আটকে রাখতে পারিনি। একটা বছর পেড়িয়ে গেল, তবুও আমাদের আড্ডায় এখনো তুমি আছো। এখনো একটা আসন খালি রাখা হয় আড্ডায় তুমি আছো তাই, উপর থেকে তাকিয়ে থেকে কি সেই আড্ডায় অংশ নাও তুমি। খুব জানতে ইচ্ছে করে, ওখানে তুমি কেমন আছো? এখনো কি হঠাৎ করে উচ্চ কন্ঠে হেসে ওঠো? 

ভীষন মনে পড়ে সেইদিনটির কথা, তুমি চলে যাবার আগের দিন রাতে ফোন করে বলেছিলে....... চাকুরীতে তোমার প্রমোশনের কথা সেই কথার সূত্রে তোমায় বলেছিলাম কিপটা আমার খাওয়া কই? আর তার প্রতি উত্তরে তুমি আমায় জানালে আমি আসছি আগামীকাল, অনেক কথা জমে আছে, তোমায় অনেক কথা বলার আছে। সেই তুমি এলে আমাদের সবার কাছে তবে স্নিগ্ধ হাসি নিয়ে নয় অনন্ত ঘুমের রাজ্যের একজন নাগরিক হয়ে এলে তুমি। কি তোমার অনেক জমানো কথা ছিল এখনো মাঝে মাঝে ভাবি, আর মাত্র এক মাস পরে আমেরিকায় চলে যাবার কথা বলতে চেয়েছিলে কি? যদি ওখানে চলে যেতে অন্তত এই পৃথিবীর কোথাও না কোথাও আছো জেনে হলেও ভাল থাকত তোমার কাছের মানুষ গুলো। 

মনে পড়ে কফি শপে সেই দিনটির কথা, কি কথার কারনে রাগ করে দিলাম ঠাস করে তোমার গালে চড় বসিয়ে, পুরো কফি শপের লোকজনের চোখ তখন আমাদের টেবিলের দিকে, তুমি গালে এক হাত ছুঁয়ে দিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে উচ্চ আওয়াজে হেসে উঠেছিলে আর তাতে করে আমি নিজেই লজ্জা পেয়েছিলাম, অমনি পুরো টেবিলের বন্ধু-বান্ধবীরা সব পারলে তখনই আমায় মেরেই হাড় গোড় ভাঙ্গে আর কি। পরে অনেকবার বলেছিলে তুমি আমায় চড় দিয়েছিলে এটা কোনদিন ভুলবনা, আমার বউ হয়ে যে আসবে তাকে আমি বলবো তোমার হাতে চড় খাওয়ার কথা, তাই শুনে আমি হাসতাম আর বলতাম হ্যাঁ বলো বলো তখন তোমার বউকেও শিখিয়ে দেবো কি করে তোমায় শায়েস্তা করতে হয়। 

তোমার ভীষন প্রিয় ছিল সি.আর.বি এবং নেভাল একাডেমীর রাস্তাটি, কতদিন আমরা সবাই একসাথে হেঁটেছি সেই রাস্তায়, আস্তে আস্তে সেই দল ছোট হতে লাগল, কেউবা বসল বিয়ের পিঁড়িতে, কেউবা প্রবেশ করল কর্মব্যস্ত জীবনে আর কেউবা পাড়ি দিল প্রবাসে। তবুও আমাদের হেঁটে বেড়ানোর ইচ্ছে মরে না। শুধু তুমি আর আমি হেঁটে বেড়িয়েছি অনেক গুলো দিন। 

একটা সময় তুমিও চাকুরীতে প্রবেশ করলে। যাবার আগেরদিন বলেছিলে ভাল থেকো তোমরা সবাই, গাজীপুর যাচ্ছি ট্রেনিং-এ, ওখান থেকেই ফোন করবো তোমাদের সবাইকে। একদিন যায় দুই দিন যায় এই করে করে এক সময় মাস পেড়িয়ে যায় কিন্তু কারো সাথেই তুমি যোগাযোগ করনি তাই নিয়ে আমাদের সব বন্ধুদের কি রাগ, সব বন্ধুদের একই কথা সজীব এইবার আসুক তারপর মজা বুঝিয়ে ছাড়বো। আমাদের সাথে যোগাযোগ না রাখার শাস্তি হলো তার প্রথম মাসের বেতনের সব টাকা নিজেদের হস্তগত করা। এমনি অনেক স্মৃতি তোমায় ঘিরে, যা কখনো ভুলতে চাইলেও ভুলে থাকা যায়না। 

তুমি চলে যাবার পর থেকে তোমার মা-বাবার সামনে গিয়ে দাড়াতে পাড়িনি, বলতে পারো ইচ্ছে করেই যাইনি তাদের কাছে, উনাদের কাছে গিয়ে কষ্টের বোঝাটা বাড়িয়ে দিতে চাইনি বলেই। শুনেছি আমাদের বন্ধুদের যে কোন একজনের দেখা পেলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে এই মানুষ দুজন। আমরা বন্ধুরা তোমায় হারিয়ে যতটা না কষ্ট পাচ্ছি তার চেয়ে বেশী কষ্ট পাচ্ছে এই মানুষ দুজন। এমন মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনার মৃত্যু আমাদের কারো কাছে কাম্য ছিলনা। এমন মৃত্যু যেন আর কারো জীবনে না ঘটে প্রতি নিয়ত সেই প্রার্থনা করি।
১৪-১২-২০০৮ ইং

৪টি মন্তব্য:

toxoid_toxaemia বলেছেন...

পড়লাম,
বলার মতন কিছু খুঁজে পাচ্ছিনা।
আমাদের এমন বন্ধুদের আমরা আর হারাতে চাইনা।
সড়ক দূর্ঘটনা প্রতিরোধে সবার একাত্মতা কাম্য।

বৃষ্টি বিলাসিনি বলেছেন...

didi're ami ki bolbo bujtechina. kotota koshto joriye chilo ei likhai. ami hoito ei likha pore bhule jabo. othoba tomader shei koshter onuvhutita ami pabona. kintu tomar moto ami dua kori jeno ei dhoroner dur ghotona karo face korte na hoi.

Sajib bhaia emon ekjon bondhu chilen jar kore jaua shob sriti tomader ekhono mone pore, shei mone porata kokhono muche jabena. bondhutto emon ekta shobdo jar nei shei bujhe r je peye harai...unar attar sahnti kamona kori.

r tomar jonno onek bhalobasha...

esho tomake joriye dhori kichukhon...tomar koshto gulo diye dau amake. jani parbona tarporo ektu to boro nissash felbe tatei tomar monta halka hobe.

যাযাবর বলেছেন...

লেখাটা পড়া শুরু করার আগে যদি জানতাম এতো মন খারাপ হয়ে যাবে, পড়তাম না।

aj Nishi বলেছেন...

touched me.. really..