বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০০৮

মনের ভাবনা ।

ইদানিং কেন জানিনা লিখতে ভাল লাগেনা। লিখতে বসেও দেখা যায় কোন বই, ম্যাগাজিন এইসব পড়ি, খুব মনযোগ দিয়ে পড়ি তাও নয়। গত বছর ডিসেম্বর মাসে যা ঘটেছে তার পর থেকে ডিসেম্বর মাস বললেই আতঙ্কিত বোধ করতাম। সবসময় শঙ্কা কাজ করতো মনে এই বুঝি আবার কোন বিপদ চলে আসে কিনা তাই ভেবে। অবশেষে দেখতে দেখতে কেটে গেল মাসটি শুধু তা নয় পুরো বছরটাও শেষ হয়ে গেল। কি পেয়েছি আর কি হারিয়েছি তার হিসাব কষতে গেলে দেখা যাবে আমার হারানোর দিকের পাল্লাটি একটু বেশী ঝুঁকে থাকবে।


এক পায়ে নূপুর আমার অন্য পা খালি
এক পাশে সাগর এক পাশে বালি
তোমার ছোট তরী বল নেবে কি?


বেজেই চলছে গানটি আর মনে মনে ভাবছি আহা আমায় যদি কেউ এইভাবে আকুল হয়ে ডাক দিতো তবেতো দিতাম ছুট। অনেকটা দিন পেরিয়ে গেল কোথাও যাওয়া হয়না। নিত্যদিন অফিস গিয়ে সেই একই নিয়ম মাফিক সব কাজ সম্পন্ন করতে গিয়ে বিরক্ত লাগছে। এই ডিসেম্বরে অফিস করেছি অনেক কম তবুও কেমন যেন লাগছে, ঠিক বোঝানো যায়না অনুভুতি গুলো।


যদি বন্ধু হও যদি বাড়াও হাত
যেন থামবে ঝড় মুছে যাবে রাত
হাসি মুখ তুলে অভিমান ভুলে
রাঙা সূর্য্য বলবে সুপ্রভাত।
সবার রঙে মিশলে রং
সুরে মিললে সুর হবে
পুরনো যত দ্বিধা দ্বন্ধ দুর
যদি ভাগ করে নাও দুঃখ সুখ
বোঝ তোমার আমার নেই তফাৎ।
হাসি মুখ তুলে অভিমান ভুলে
রাঙা সূর্য্য বলবে সুপ্রভাত।


শুভমিতা গেয়ে চলেছে বন্ধু নিয়ে চমৎকার একটি গান। আগামী কাল নতুন একটা বছর প্রবেশ করবে, সব কিছুই নতুনভাবে শুরু করতে হবে জানি। এমন কত নতুন বছরকে বরণ করেছি সব বন্ধুরা একসাথে মিলিত হয়ে গানে গানে আর হৈ হুল্লোর করে। এখন কে কত দুরে চলে গেছে, মুঠো ফোনে শুধু কয়েক লাইনের বার্তা পাঠিয়েই আমরা আমাদের বন্ধুতা রক্ষা করে চলেছি। 

বাংলাদেশের জন্য নতুন বছরটি বয়ে আনুক অনেক অনেক শুভ বার্তা। দেশের জনগণ নতুন একটি সরকার এনেছে, বিজয়ের মাসে আরেকটি বিজয় নিয়ে এলো আমাদের দেশবাসী। এবার ভোট দিতে গিয়ে কোন লোকজনকে আতঙ্কগ্রস্ত হতে দেখিনি সেটাই ছিল অনেক ভাল লাগার ব্যাপার। দুপুর বেলা ভোট দিতে গেলে নিজের ভোট অন্য লোক দিয়ে দেবে তাই ভেবেও কেউকে দেখিনি চিন্তিত হতে। যারা এবার প্রথম ভোট দিল তাদেরও উৎসাহের কমতি ছিলনা দেখেছি। তাই বর্তমান প্রজন্মের অনেক অবদান রয়েছে নতুন এই সরকার গঠনের ব্যাপারে। সুন্দর সু-শৃংখল ভাবে লোকজন ভোট দিচ্ছিল তাই দেখতে ভীষন ভাল লাগছিল। তখন মনে হচ্ছিল আমাদের দেশের জনগণ চাইলে কি-না করতে পারে। 

প্রার্থনা করি নতুন বছর সবার জীবনে বয়ে আনুক সুখ, শান্তি আর সমৃদ্ধি। সবার জীবন ভরে থাক ভালবাসা আর স্নেন মমতায়।


রবিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০০৮

মেঘ হলে মন বিকেল বেলায়.....

মেঘ হলে মন বিকেল বেলায়
একলা যেতাম মেঘের বাড়ী।
মেঘ হতো কাশ ফুলের দু-চোখ
দৃষ্টি কিন্তু খুব আনাড়ী আনাড়ী।।

কিন্তু মনে মেঘ থাকেনা
মেঘ ছাড়া আকাশ খালি
বোতাম খোলা জানালা বুকে
বইছে হাওয়া শুধু শুন্যতারি
মেঘ হলে মন বিকেল বেলায়
একলা যেতাম মেঘের বাড়ী।।

মন খারাপে মেঘের গায়ে
আঁকছে আকাশ একলা ছবি
মেঘ থেকে মেঘ শব্দে সুরে
গল্প সবই যন্ত্রনারই।

এখন আকাশ একলা থাকে
মেঘ নেই আর মেঘের বাড়ী
বোতাম খোলা জানালা বুকে
বইছে হাওয়া শুধু শুন্যতারি


মেঘ হলে মন বিকেল বেলায় 
একলা যেতাম মেঘের বাড়ী
মেঘ হতো কাশ ফুলের দু-চোখ
দৃষ্টি কিন্তু খুব আনাড়ী আনাড়ীll



বন্ধু তোমায় মনে পড়ে।


আজ সব বন্ধু-বান্ধবীরা এক সাথে বসেছিলাম মনে মনে ঠিক করে নিয়েছিলাম আজ আমি চোখের জল ফেলবনা।  কিন্তু সবাই এক সাথে হয়ে তোমার কথা বলে উঠতেই নিজের চোখের জল আটকে রাখতে পারিনি। একটা বছর পেড়িয়ে গেল, তবুও আমাদের আড্ডায় এখনো তুমি আছো। এখনো একটা আসন খালি রাখা হয় আড্ডায় তুমি আছো তাই, উপর থেকে তাকিয়ে থেকে কি সেই আড্ডায় অংশ নাও তুমি। খুব জানতে ইচ্ছে করে, ওখানে তুমি কেমন আছো? এখনো কি হঠাৎ করে উচ্চ কন্ঠে হেসে ওঠো? 

ভীষন মনে পড়ে সেইদিনটির কথা, তুমি চলে যাবার আগের দিন রাতে ফোন করে বলেছিলে....... চাকুরীতে তোমার প্রমোশনের কথা সেই কথার সূত্রে তোমায় বলেছিলাম কিপটা আমার খাওয়া কই? আর তার প্রতি উত্তরে তুমি আমায় জানালে আমি আসছি আগামীকাল, অনেক কথা জমে আছে, তোমায় অনেক কথা বলার আছে। সেই তুমি এলে আমাদের সবার কাছে তবে স্নিগ্ধ হাসি নিয়ে নয় অনন্ত ঘুমের রাজ্যের একজন নাগরিক হয়ে এলে তুমি। কি তোমার অনেক জমানো কথা ছিল এখনো মাঝে মাঝে ভাবি, আর মাত্র এক মাস পরে আমেরিকায় চলে যাবার কথা বলতে চেয়েছিলে কি? যদি ওখানে চলে যেতে অন্তত এই পৃথিবীর কোথাও না কোথাও আছো জেনে হলেও ভাল থাকত তোমার কাছের মানুষ গুলো। 

মনে পড়ে কফি শপে সেই দিনটির কথা, কি কথার কারনে রাগ করে দিলাম ঠাস করে তোমার গালে চড় বসিয়ে, পুরো কফি শপের লোকজনের চোখ তখন আমাদের টেবিলের দিকে, তুমি গালে এক হাত ছুঁয়ে দিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে উচ্চ আওয়াজে হেসে উঠেছিলে আর তাতে করে আমি নিজেই লজ্জা পেয়েছিলাম, অমনি পুরো টেবিলের বন্ধু-বান্ধবীরা সব পারলে তখনই আমায় মেরেই হাড় গোড় ভাঙ্গে আর কি। পরে অনেকবার বলেছিলে তুমি আমায় চড় দিয়েছিলে এটা কোনদিন ভুলবনা, আমার বউ হয়ে যে আসবে তাকে আমি বলবো তোমার হাতে চড় খাওয়ার কথা, তাই শুনে আমি হাসতাম আর বলতাম হ্যাঁ বলো বলো তখন তোমার বউকেও শিখিয়ে দেবো কি করে তোমায় শায়েস্তা করতে হয়। 

তোমার ভীষন প্রিয় ছিল সি.আর.বি এবং নেভাল একাডেমীর রাস্তাটি, কতদিন আমরা সবাই একসাথে হেঁটেছি সেই রাস্তায়, আস্তে আস্তে সেই দল ছোট হতে লাগল, কেউবা বসল বিয়ের পিঁড়িতে, কেউবা প্রবেশ করল কর্মব্যস্ত জীবনে আর কেউবা পাড়ি দিল প্রবাসে। তবুও আমাদের হেঁটে বেড়ানোর ইচ্ছে মরে না। শুধু তুমি আর আমি হেঁটে বেড়িয়েছি অনেক গুলো দিন। 

একটা সময় তুমিও চাকুরীতে প্রবেশ করলে। যাবার আগেরদিন বলেছিলে ভাল থেকো তোমরা সবাই, গাজীপুর যাচ্ছি ট্রেনিং-এ, ওখান থেকেই ফোন করবো তোমাদের সবাইকে। একদিন যায় দুই দিন যায় এই করে করে এক সময় মাস পেড়িয়ে যায় কিন্তু কারো সাথেই তুমি যোগাযোগ করনি তাই নিয়ে আমাদের সব বন্ধুদের কি রাগ, সব বন্ধুদের একই কথা সজীব এইবার আসুক তারপর মজা বুঝিয়ে ছাড়বো। আমাদের সাথে যোগাযোগ না রাখার শাস্তি হলো তার প্রথম মাসের বেতনের সব টাকা নিজেদের হস্তগত করা। এমনি অনেক স্মৃতি তোমায় ঘিরে, যা কখনো ভুলতে চাইলেও ভুলে থাকা যায়না। 

তুমি চলে যাবার পর থেকে তোমার মা-বাবার সামনে গিয়ে দাড়াতে পাড়িনি, বলতে পারো ইচ্ছে করেই যাইনি তাদের কাছে, উনাদের কাছে গিয়ে কষ্টের বোঝাটা বাড়িয়ে দিতে চাইনি বলেই। শুনেছি আমাদের বন্ধুদের যে কোন একজনের দেখা পেলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে এই মানুষ দুজন। আমরা বন্ধুরা তোমায় হারিয়ে যতটা না কষ্ট পাচ্ছি তার চেয়ে বেশী কষ্ট পাচ্ছে এই মানুষ দুজন। এমন মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনার মৃত্যু আমাদের কারো কাছে কাম্য ছিলনা। এমন মৃত্যু যেন আর কারো জীবনে না ঘটে প্রতি নিয়ত সেই প্রার্থনা করি।
১৪-১২-২০০৮ ইং