রবিবার, ৬ জানুয়ারী, ২০১৩

মেঘবালিকার জন্য রূপকথা

 

মেঘবালিকার জন্য রূপকথা 

                                      - জয় গোস্বামী 

আমি যখন ছোট ছিলাম খেলতে যেতেম মেঘের দলে,
একদিন এক মেঘবালিকা, প্রশ্ন করলো কৌতুহলে- 
"এই ছেলেটা নাম কি রে তোর??" 
আমি বললেম, "ফুসমন্তর" 
মেঘবালিকা রেগেই আগুন-
"মিথ্যে কথা, নাম কি ওমন হয় কখনো??" 
আমি বললেম, "নিশ্চই হয়, আগে আমার গল্প শোন!!" 
সে বললো, "শুনব না যা-"
"সেই তো রাণী, সেই তো রাজা-"
"সেই তো একি ডাল-তলোয়ার"
"সেই তো একি রাজার কুমার পক্ষীরাজে"
"শুনব না যা ওসব বাজে"  
আমি বললেম, "উম্‌ তোমার জন্যে নতুন করে লিখব তবে!
"সে বললো, "সত্যি লিখবি??"
"বেশ! তাহলে মস্ত করে লিখতে হবে!"
"মনে থাকবে? লিখে কিন্তু আমায় দিবি"
আমি বললেম, "তোমার জন্য লিখতে পারি এক পৃথিবী"
 
  লিখতে লিখতে লেখা যখন সবে মাত্র দু'চার পাতা
হঠাৎ তখন ভূত চাপলো আমার মাথায়
খুঁজতে খুঁজতে চলে গেলাম ছোটবেলার মেঘের মাঠে
গিয়ে দেখি চেনা মুখ তো একটিও নেই এই তল্লাটে।
একজনকে মনে হল ওরি মধ্যে অন্যরকম
এগিয়ে গিয়ে বললেম তাকে, "তুমি কি সেই?? মেঘবালিকা, তুমি কি সেই??"
সে বললো, "মনে তো নেই, আমার ওসব মনে তো নেই"
আমি বললেম, "তুমি আমায় লেখার কথা বলেছিলে" 
সে বললো, "সঙ্গে আছে? ভাসিয়ে দাও গাঙের ঝিলে-"
"আর হ্যাঁ শোন..এখন আমি মেঘ নই আর..."
"সবাই এখন বৃষ্টি বলে ডাকে আমায়..."
বলেই হঠাৎ, এক পশলায় 
চুল থেকে নখ আমায় পুরো ভিজিয়ে দিয়ে
অন্য অন্য বৃষ্টি বাদল সঙ্গে নিয়ে  
মিলিয়ে গেলো খরস্রোতায়, মিলিয়ে গেল  
দূরে কোথায়, দূরে, দূরে...
"বৃষ্টি বলে ডাকে আমায়..বৃষ্টি বলে ডাকে আমায়" 
 
আপন মনে বলতে বলতে আমি কেবল বসেই রইলাম 
ভিজে একশা কাপড় জামায় 
গাছের তলায় বসেই রইলাম,
বৃষ্টি নাকি মেঘের জন্য??
এমন সময় অন্য একটি বৃষ্টি আমায় চিনতে পেরে বললো,
"তাতে মন খারাপের কি হয়েছে??"
"যাও ফিরে যাও, লেখো আবার"
"এখন পুরো বর্ষা চলছে"
"তাই আমরা সবাই এখন নানান দেশে ভীষণ ব্যস্ত"
"তুমি-যাও মন দাও গে তোমার কাজে"
"বর্ষা থেকে ফিরে আমরা নিজেই যাবো তোমার কাছে" 
 
  এক পৃথিবী লিখবো আমি 
এক পৃথিবী লিখবো বলে ঘর ছেড়ে সেই বেড়িয়ে গেলাম। 
ঘর ছেড়ে সেই ঘর বাঁধলাম গহন বনে 
সঙ্গী শুধু কাগজ কলম 
একাই থাকবো, একাই দুটো ফুটিয়ে খাবো 
দু এক মুঠো ধুলোবালি 
যখন যারা আসবে মনে তাদের লিখবো, লিখেই যাবো  
এক পৃথিবীর একশো রকম স্বপ্ন দেখার
 সাধ্য থাকবে যেই রূপকথার
সেই রূপকথা 
আমার একার।
 
  ঘাড় গুঁজে দিন লিখতে লিখতে 
ঘাড় গুঁজে রাত লিখতে লিখতে 
মুছেছে দিন 
মুছেছে রাত 
যখন আমার লেখবার হাত অসাড় হলো 
মনে পরলো সাল কি তারিখ 
বছর কি মাস সেসব হিসেব আর ধরিনি। 
লেখার দিকে তাকিয়ে দেখি 
এক পৃথিবী লিখবো বলে একটা খাতাও শেষ করিনি। 
সঙ্গে সঙ্গে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এল, খাতার উপর 
আজীবনের লেখার উপর 
বৃষ্টি এল এই অরণ্যে।
 
  বাইরে তখন গাছের নীচে নাচছে ময়ূর আনন্দিত 
এ-গাছ ও-গাছ উড়ছে পাখি 
বলছে পাখি, "এই অরণ্যে কবির জন্য আমরা থাকি" 
বলছে ওরা, "কবির জন্য, আমরা কোথাও, আমরা কোথাও, আমরা কোথাও হার মানিনি" 
কবি তখন কুটির থেকে 
তাকিয়ে আছে অনেক দূরে 
বনের 'পরে, মাঠের 'পরে, নদীর 'পরে 
সেই যেখানে সারাজীবন বৃষ্টি পরে, বৃষ্টি পরে 
সেই যেখানে কেও যায়নি 
কেও যায়না কোনদিনি 
আজ সে কবি দেখতে পাচ্ছে
সেই দেশে সেই ঝর্ণাতলায় 
এদিক ওদিক ছুটে বেড়ায় 
সোনায় মোড়া মেঘ হরিণী
কিশোর বেলার সেই হরিণী

২টি মন্তব্য:

বৃষ্টি বিলাসিনি বলেছেন...

বাহ! দিদি এই প্রতিভার সাথে পরিচয় ছিলনা। তুমি কি নিয়মিত লিখ?

~ মেঘের অনেক রং ~ বলেছেন...

Minus Shorbonash...
eto boro ekjon kobir kobita amar bole chaliye debo, amar ki matha noshto holo naki... Eta Joy Goswami'r lekha kobita Meghbalikar Jonnye Rupkotha :)