মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০০৮

কদম ফুলের তিক্ত অভিজ্ঞতা



 "বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছো দান
আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের দান"

ছোট বেলা থেকেই এই গানটা শুনে শুনে বর্ষার কদম ফুলের প্রতি একটা টান অনুভব করতাম। কদম ফুল দেখেছি অনেকবার কিন্তুু গাছ দেখতে কি রকম হতে পারে তা আমার জানা ছিলনা। এই গাছ দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে এখন আমি যে বাসাতে থাকি সেই বাসায় আসার পরেই। এই বাসাটিতে আসার পর বেশ কয়েকটা বছর কেটে যাবার পরেও আমার পরিবারের কেউ বুঝতে পারেনি বাসার সামনের সরু রাস্তার ওপাড়ে পাহাড়ের নীচে একটা কদম ফুল গাছ আস্তে আস্তে বেড়ে উঠছে, যার দূরত্ব আমাদের ছয় তলার বাসা থেকে সামান্য একটু। আষাঢ় মাসে বেশ কয়েকদিন বৃষ্টির পরে একদিন দেখি বাসার সামনের গাছটিতে সবুজ পাতার ফাঁকে ফাকে সাদা গুটি বেরিয়েছে। অনেক কৌতুহল নিয়ে ছোট বোনদের ডেকে গাছটি দেখালাম। বৃষ্টির জলে ধোয়া সবুজ পাতার ফাঁকে সাদা গুটি গুলো দেখতে ভীষন সুন্দর লাগছিল, মনে মনে ভাবছিলাম হয়তো হবে কোন নাম না জানা পাহাড়ী গাছের ফুল অথবা ফল। এরপর কয়েকটা দিন যাবার পরে লক্ষ্য করলাম এটা আর নাম না জানা নয় রবি ঠাকুরের লেখা সেই চেনা গানেরই কদম ফুল। তখন আমাদের আনন্দ দেখে কে। তিন বোন মিলে সারাদিন গাছটা দেখি আর ভাবি, আহা কখন ফুল গুলো আরো বড় হবে। আমাদের বাসায় যত বন্ধু-বান্ধব আসুক সবাইকে ডেকে ডেকে গাছটা দেখাই আর বলি দেখ কি সুন্দর কদম ফুল গাছটা।

বেশ কিছুদিন থেকে লক্ষ্য করছি, সন্ধ্যা নামার পরেই পুরো বাসা জুড়ে একটা বোটকা গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। পুরো বাড়ীতে এয়ার ফ্রেশনার সেপ্র করা হয় কিন্তুু সাময়িক ভাবে গন্ধটা গেলেও আবার নাকে এসে লাগে। খোঁজ চলতে থাকে গন্ধের উৎস কি? একদিন ছোট বোন বলল গন্ধটা টয়লেট থেকে আসে, তখন আমরা বাকী দুই বোন মা কে বলি এটা বোধহয় প্রশ্রাবের গন্ধ। তাই শুনেতো মা টয়লেটে গিয়ে সেপ্র করে, হারপিক ঢালে আর বালতি বালতি পানি ঢেলে পরিস্কার করতে থাকে তবুও গন্ধ যায়না। আর এই দিকে বাসায় কোন অতিথি এসে বসার ঘরে কিছুক্ষন বসার পরেই হাত দিয়ে নাক বন্ধ করে অথবা উসখুস করতে থাকে, তাই দেখেতো আমরা লজ্জায় মরি, অনেকে আবার বলে ফেলে কিসের যেন একটা গন্ধ পাচ্ছি।

কদম ফুল গুলো যখন বড় হয়ে সোনালী রং ধারন করলো, একদিন দুপুর বেলা একটা ছোট ছেলেকে গাছে উঠিয়ে অনেক গুলো ফুল পাড়িয়ে আনলাম, আমাদের তিন বোনের আনন্দ উপচে পড়ছে কদম ফুল হাতে পেয়ে। কিছু ফুল বসার ঘরের ফুলদানিতে যত্ন করে পানি দিয়ে সাজিয়ে রাখলাম আর কিছু ফুল রাখলাম নিজের রুমে বিছানার পাশেই। ঐ দিন মাঝরাতে ঘুম ভাঙ্গার পর এতো বেশী গন্ধটা নাকে লাগছিল পেট মোচড় দিয়ে ভিতর থেকে সব বেরিয়ে আসতে চাইছিল। রুমে এয়ার ফ্রেশনার সেপ্র করলাম তাও যায়না, শেষ পর্যন্ত মায়ের শখের পারফিউম এর একটা এনে নিজের কাপড়ে, বিছানায় সেপ্র করলাম। হঠাৎ আমার ভাবনায় এলো অন্যান্য দিনের চেয়ে আজ গন্ধটা তীব্র ভাবে নাকে লাগার কারন বাথরুম নয় অন্য কিছু হবে, কি ভেবে যেন কদম ফুল গুলো পরম মমতায় হাতে নিয়ে যেই নাকের কাছে এনে একটা গভীর নিঃশ্বাস নিলাম তখনি ভিতরে ঢুকলো সেই বোটকা গন্ধটি। সাথে সাথে অনুভব করলাম তীব্র গন্ধের উৎসটা এতদিন যাবৎ কোথায় ছিল।

এরপর থেকে প্রতি বছর বর্ষা এলেই আমরা তিন বোন সেই গন্ধটার কথা ভেবে আতঙ্কে মরি। বাসায় অতিথি এলে যখন দেখতাম গন্ধের উৎস খোঁজার জন্য এদিক ওদিক তাকাচ্ছে তখন বোনদের মধ্যে যে কেউ বলে উঠতাম আপনি কি কোন গন্ধ পাচ্ছেন, ওটা কদম ফুলের গন্ধ, অন্য কিছুর গন্ধ নয়, জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখুন ওইতো কদম ফুল গাছ।

কদম ফুল নিয়ে এত তিক্ত অভিজ্ঞতা হবার পরেও আমার মা গতকাল হঠাৎ করে গাছটার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, এই বছর এখনো কদম ফুল গাছটাতে ফুল এলোনা, ভালো করে বৃষ্টিটা পড়েনা কেন, তাহলেইতো গাছটা ফুলে ফুলে ছেয়ে যেতো।

১৮-০৬-২০০৮

(এই লিখাটি লিখেছিলাম বর্ষা কালে। অনেকদিন আগে লিখা কদম ফুল নিয়ে আমার এই তিক্ত অভিজ্ঞতাটি হঠাৎ ইচ্ছে হলো আপনাদের একটু বলি, তাই এখানে দিয়ে দিলাম। )

১১টি মন্তব্য:

irtiza বলেছেন...

haaaaaaaaahaaaahaahahaha

by the way, post bade baki bangla lekha gulor font size khubi chhoto. porte oshubidha hoy. onno browser eo emon hochchhe kina jani na, bt amartay jotheshto small ashtese. vablam report kora dorkar!!

amk noisy mone hole kichchu korar nai

~ মেঘের অনেক রং ~ বলেছেন...

irtiza tomake noisy mone hobe keno... borong tumi amar pocha likha gulo porcho tatei amar onek vhalo lagche.:-)font size er jei problem tar kottha bolle dekhi oi porb. are onnyo karo hoy kina... amar pc te shob font gulo ekii size show korch...

toxoid_toxaemia বলেছেন...

লেখাটা আগেই পড়েছি তাই তোমাকে কোনও ধন্যযোগ দিবোনা।
এমনই হয়, দেখতে দেখতে হয়তো অপ্রিয় জিনিসটার জন্যেও মায়া পড়ে যায়। আমি মজিলা ব্যবহার করি, ফন্টের সাইজটি তো ঠিক দেখাচ্ছে এখানে। মনেহয় তুমি কনভার্টার ব্যবহার করেছ, বেশ হয়েছে এবার। ইমেইল নোটিফিকেশন দেখলাম বাংলায় আসছে। ভালই।

বৃষ্টি বিলাসিনি বলেছেন...

munidiiiiiiiiiiiii

tomar ei likha amar mon kere nilo...
bhishon bhalo laglo.

"badolo diner prothomo kodomo phul korecho dan"

deee, tumi khb khub khubbbbbbbbbbb bhalo likho.

বৃষ্টি বিলাসিনি বলেছেন...

r e dee, green font tar karone chokh ta kemon jeno betha korche. dhukkhito dee ami ashole bolte chaini. kintu bhablam future to koto porbo tomar likha jodi tumi change koro :(

~ মেঘের অনেক রং ~ বলেছেন...

Oshonkyo dhonnyobad Minus toke..... satyee vhison vhalo lagche tor comment peye karon tui nije etto vhalo likhis sei vhalo lekhikar kach theke proshongsha pete kar na vhalo lage...:-)
are shon tor eto dukkhito hote hobena... kono beypar kharap lagle seta oboshoi bolbi... :-), change kore dilam font color gulo...

~ মেঘের অনেক রং ~ বলেছেন...

Tox hee ami convert kore niyechi Bijoy theke... tui help na korle partamnare bhai.... sei jonnye toke dhonnyobad.:)

irtiza বলেছেন...

hi, this template looks better than the older one. maybe you could add a few more add-ons on the sidebar... just saying.

BTW, notun lekha ashchhe na keno?

wait korchhi to

বৃষ্টি বিলাসিনি বলেছেন...

deeeeeeeeeeeee

bah ekhon besh bhalo lagche...header ta chomotkar :d

নামহীন বলেছেন...

আচ্ছা, অক্ষরগুলো ভেঙে ভেঙে দেখছি কেন? আমি ফন্ট বিষয়ে বিশেষ অজ্ঞ :(

~ মেঘের অনেক রং ~ বলেছেন...

Apuni tumi amar ekhane.....
ekhonto amar lojjay mukh lukate iche korche...:)
eto vhalo ekjon manush are vhalo ekjon lekhika ke amar ekhane dekhe khub vhalo lagche....
apuni amito bujhte parchina tumi font gulo vhenge vhenge dekhcho keno...:(, tobe ei likhata likhechilam bijoy font diye pore avro diye convert kore niyechilam.